⚖️ ঘটনার বাস্তব তদন্ত বলতে কি বুঝায়?

ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৬ ধারার বিধান মতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ছাড়াই কোনো আমলযোগ্য অপরাধের তদন্ত নিজে করতে পারেন এবং তার অধীনস্ত সাব-ইন্সপেক্টর পদের নীচে নয় এমন অফিসার দ্বারা তদন্ত করাইতে পারেন। তাছাড়া ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৫১ ধারায় বর্ণিত বিধান অনুসারে উর্ধ্বতন অফিসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ন্যায় তার এলাকার মধ্যে ওসির সমান ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। ঘটনার বাস্তব তদন্ত বলতে যা বুঝায় তার প্রকৃত ব্যাখ্যা হলো যে, কোনো অপরাধ সম্পর্কে তথ্য উদঘাটন করা এবং প্রকৃত অপরাধীকে খুজে বের করে আইনের হাতে তুলে দেওয়া। 

প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্ত করা সম্ভবপর নয় এমন নয় এবং কোনো ক্রমেই যেনো কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি আইনে সাজা না পায়। আরও বলা যায় যে, আইনের দৃষ্টিতে কোনো অপরাধী বিচারে যদি খালাস পায় তাহলে সমাজে ইহার প্রতিক্রিয়া থাকলেও কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি সাজা পাইলে সেক্ষেত্রে আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা অনেক ক্ষেত্রে হ্রাস পায়। ইহাই ঘটনার বাস্তব তদন্ত। তদন্তকারী অফিসার তদন্তে যাওয়ার পূর্বে মামলা যদি ডাকাতি, রাহাজানি, সিঁধেলচারি অথবা চুরি মামলা হয়, তাহলে তিনি থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোনা করবেন এবং ভিসিএনবি ও সিডিএমএস হতে প্রয়োজনীয় তথ্যের নোট নিবেন। পিআরবি ২৫৮ প্রবিধান মতে যতো শীঘ্র সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌছিবেন। ঘটনার সংবাদ যদি রাত্রিতে পাওয়া যায় তাহলেও তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিতে হবে। ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় তিনি এজাহারের কপি, কলম, কার্বন, স্কেল, আলপিন, গৃহ তল্লাশীর ফরম বা জব্দ তালিকার ফরম, কাগজ, কেস ডায়রী, বোর্ড, ক্যামেরা, হাত ও পায়ের ছাপ গ্রহণের সরঞ্জাম, পেনসিলকাটার এবং হাতকড়া সংগে নিবেন। তদন্তকারী অফিসার অবশ্যই ইউনিফর্ম পরিধান করবেন। ঘটনাস্থলে পৌছামাত্র সংগীয় ফোর্সদের প্রয়োজনীয় উপদেশ দিয়ে ঘটনাস্থলের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা কোনো বস্তুগত সাক্ষ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ঘটনাস্থলে অপরাধীর হাতের ছাপ, পায়ের ছাপ, রক্ত, জুতা, স্যান্ডেল, সিগারেট বা অন্য কিছু পাওয়া গেলে তা সাক্ষীদের সম্মুখে জব্দ করতে হবে এবং প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সিআইডি, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা থেকে পরীক্ষা পূর্বক রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে। 

তদন্তকালীন সন্দেহজনক ব্যক্তির নিকট হতে প্রাপ্ত দ্রব্য পদ্ধতিগতভাবে সংগ্রহ করার পর প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্ত করার জন্য ঘটনাস্থল হতে প্রাপ্ত হাত ও পায়ের ছাপ সন্দেহযুক্ত ব্যক্তির হাত ও পায়ের ছাপের সহিত মিল পাওয়া যায় কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক জবানবন্দী রেকর্ড করতে হবে। ঘটনায় জড়িত কোনো আসামী গ্রেফতার হলে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক ম্যাজিষ্ট্রেটের মাধ্যমে জবানবন্দী রেকর্ড করাতে হবে এবং আসামী সন্দিগ্ধ হলে কিংবা কোনো মালামাল উদ্ধার হলে টিআই প্যারেডের মাধমে সনাক্ত করতে হবে।  

ঘটনার বাস্তব তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারকে পরিমিত জ্ঞানের অধিকারী ও আইনের বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতে হবে। তার কার্ম পদ্ধতি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সহিত পরিচালিত করতে হবে। তাকে ধীরস্থির ও নির্ভীক চিত্তের অধিকারী হতে হবে। তাকে অবশ্যই মিষ্টভাষী হতে হবে। অবস্থা বিশেষে কর্কশ ভাষা বর্জন এবং ধৈর্য গ্রহণ করতে হবে। উপর্যুক্ত গুণাবলী থাকলেই একজন তদন্তকারী অফিসার ঘটনার বাস্তব তদন্তে সাফল্য অর্জন করতে পারবে এবং তদন্তে সফলতা অর্জন করা যাবে।