⚖️ সন্দেহভাজন আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল কি?
- Author: MD Sirajul Islam, Inspector of Police
- Published: 2 days ago
- Category: অপরাধ বিজ্ঞান
-
অপরাধ তদন্ত, প্রতিরোধ বা নিবারণে পুলিশকে এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতার বা জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন পড়ে যাদের বিরুদ্ধে আপাতত অপরাধে জড়িত থাকার প্রাথমিক কোনো প্রমাণ নেই। এদের অপরাধ সংশ্রবতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়েই জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বিশেষত যে অপরাধের কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই, কোনো ক্লু খোঁজে পাওয়া যায়নি, সেখানে পুলিশ অফিসারকে এলাকার কোনো কোনো ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন গ্রেফতার করে কিংবা থানায় ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। তাছাড়া নিবৃত্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে গিয়েও এরকম ব্যক্তিদের প্রশ্ন করা দরকার পড়ে।
সন্দেহভাজন আসামী কারা?
যে সকল ব্যক্তিকে পুলিশ তদন্তের স্বার্থে কিংবা অপরাধ নিবারণের স্বার্থে গ্রেফতার করে অথবা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনে অথবা যাদের অপরাধ সংশ্লিষ্টতায় সন্দেহ রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি তারাই সন্দেহভাজন আসামী।
নিম্নবর্ণিত আসামীরা সন্দেহভাজন জিজ্ঞাস্য ব্যক্তিঃ
(১) ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি।
(২) ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫১ ধারায় প্রতিরোধ বা নিবর্তনমূলক পদক্ষেপের জন্য গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি।
(৩) অজ্ঞাত অপরাধীকে ধরার জন্য সন্দেহভাজন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি।
(৪) পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের আলোকে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি।
(৫) পূর্ব রেকর্ড অনুসারে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি।
(৬) অপরাধ পূর্ববর্তী বা পরবর্তী আচরণের ভিত্তিতে সন্দেবশত কাউকে গ্রেফতার করা হলে।
(৭) সন্দেহবশত গ্রেফতারকৃত অন্যান্যরা।
(৮) ধর্তব্য মামলায় সন্দেহবশত গ্রেফতারকৃত কিন্তু এফআইআর এ নাম নেই এমন ব্যক্তি।
সন্দেহভাজন আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৌশলগুলো আবেগপ্রবণ ও আবেগহীন অপরাধীর বেলায় প্রজোয্য। কৌশলগুলোর সঙ্গে ক্রমানুসারে সংখ্যা দ্বারা নির্দেশীত হয়েছে; কেননা এ ক্ষেত্রেও কৌশলগুলো সৃজনশীলতার সঙ্গে সন্দেহভাজন আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদেও ব্যবহার করতে সক্ষম। কৌশলগুলো বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে জিজ্ঞাসাবাদকারীর দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে কি হতে পারে এবং এগুলোর সুবিধা ও অসুবিধার উপর আলোকপাত করা দরকার।
জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশ অফিসারের দৃষ্টিভঙ্গিঃ
যাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা থানায় ডেকে আনা হয়েছে অথবা যাদের অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি তাদের জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশ অফিসার তিন প্রকার দৃষ্টিভঙ্গির যে কোনো একটি গ্রহণ করে থাকেন। যেমন-
(১) আসামীর সামাজিক অবস্থান,
(২) পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং
(৩) তদন্তকারীর ইচ্ছা।
এগুলোর উপর নির্ভর করে তিনি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে অগ্রসর হবেন।
(১) শুরুতেই জিজ্ঞাস্য ব্যক্তির সামনে তিনি ভান করেন যে উক্ত আসামীই তদন্তাধীন মামলার প্রকৃত অপরাধী।
(২) জিজ্ঞাসাবাদের শুরু থেকেই তিনি এমন হাবভাব দেখান যে জিজ্ঞাস্য ব্যক্তি সম্পূর্ণ নির্দোষ। অপরাধে সে মোটেই জড়িত নয়।
(৩) শুরু থেকেই তদন্তকারী নিরপেক্ষ অবস্থান নেন। এমন কোনো আচরণ বা কথা বলেন যাতে প্রতীয়মান হতে পারে যে, জিজ্ঞাস্য ব্যক্তিটিই অপরাধী কিংবা নির্দোষ।
জিজ্ঞাসাবাদ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকেই তিনি ব্যক্তিটি সম্পর্কে মতামত রাখেন এবং তদানুসারে আচরণ করেন।
জিজ্ঞাসাবাদের কৌশলঃ
জিজ্ঞাস্য ব্যক্তির মুখের দিকে তাকিয়েই বলা সম্ভব নয় যে, ব্যক্তিটি সত্য না মিথ্যা বলছে। এটি নির্ধারণের জন্য ব্যক্তিটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা দরকার; তার সঙ্গে কথাবার্তা বলা ও প্রশ্ন করে পরিবেশ-পরিস্থিতির ব্যাখ্যা চাওয়া প্রয়োজন। জিজ্ঞাসাবাদকালে তার শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলো গভীর মনোযোগের দাবি রাখে। তার বক্তব্যে কোনোরূপ অসঙ্গতি আছে কিনা, তার প্রদত্ত তথ্য জ্ঞাত তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি যাদের অপরাধ সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে নিশ্চত হওয়া যায়নি কিংবা যারা যৌক্তিক কারণে সন্দেহগ্রস্ত হয়নি তাদের ক্ষেত্রে আবেগপ্রবণ ও আবেগহীন অপরাধীদের জন্য প্রযোজ্য কৌশলগুলো পরিস্থিতির চাহিদা অনুসারে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সন্দেহভাজন আসামীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে তাকে কি কারণে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় ডেকে এনেছে বা গ্রেফতার করেছে এ বিষয়ে সে কিছু জানে কিনা। যদি জিজ্ঞাসাবাদের আগে গ্রেফতারকারী অফিসার সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থানায় আনার কারণ বলে না থাকেন, তবে জিজ্ঞাসাবাদকারীর জন্য উত্তম কৌশল হলো তাকে বলা, তুমি কি বলতে পারো কেনো পুলিশ তোমাকে থানায় এনেছে? ব্যক্তিটি দোষী হলে এ প্রশ্ন তাকে তাৎক্ষণিক নাজুক পরিস্থিতিতে ফেলে দেবে। তার আত্মরক্ষার জন্য মানসিক প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হবে। যদি মনে হয় জিজ্ঞাস্য ব্যক্তির পক্ষে খুব সম্ভব অনুমান করা কোন ঘটনার সন্দেহে তাকে থানায় আনা হয়েছে অথবা সে সম্পুর্ণ অজ্ঞতা প্রকাশ করছে, তবে তদন্তকারী অপরাধ বোধের শারীরিক লক্ষণগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করবেন এবং এর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করবেন। এভাবে তিনি ব্যক্তিটি দোষী না নির্দোষী সেবিষয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হবেন।
জিজ্ঞাস্য ব্যক্তি যদি বলে যে, কি কারণে তাকে থানায় আনা হয়েছে সে জানে, তবে তার অবস্থা আরো বিপজ্জনক হবে। প্রকৃত দোষী হলে তার পক্ষে জেরার সময় নির্দোষিতার ভান করা সব সময় সম্ভব হবে না। পরবর্তী অপরাধ সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে অপারগ হবে। জিজ্ঞাসাবাদকারীর একটি সরল প্রশ্ন তাকে বেকায়দায় ফেলে দিতে পারে। যেমন-
প্রশ্নঃ ঠিক আছে, যদি জানই তবে ঘটনাটা পুরোপুরি খুলে বলো?
এ অবস্থায় নিজের অপরাধবোধ লুকানো ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না; আর এটা করতে গেলেই কতকগুলো শারীরিক লক্ষণ স্পষ্ট ফুটে উঠবে।